রড জোড়া দেয়ার জন্য Rebar Coupler ব্যবহারের গুরুত্ব

প্রফেসর ডঃ জাহাঙ্গীর আলম স্যার
প্রাক্তন অধ্যাপক, ডিপার্টমেন্ট অফ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, বুয়েট
লিড কনসালটেন্ট, GnS লিমিটেড
রিবার কাপ্লার কি?
কনক্রীটের শক্তি বাড়ানোর জন্য বিল্ডিং বা যে কোন স্থাপনা তৈরীতে রড ব্যবহার করা হয়। কলাম এবং বীমে রড প্রয়োজনমত সাজাতে রড জোড়া দেয়া ছাড়া উপায় থাকেনা। রিবার কাপ্লার হচ্ছে ২ টা রড জোড়া দেয়ার উপায়গুলোর মধ্যে সর্বোত্তম একটি উপায়। Rebar Coupler হলো এক প্রকার শক্তিশালি নাট যা দিয়ে রড জোড়া দেয়া হয়।
২ দিকের রডে প্যাঁচ কাটা হয় এবং রিবার কাপ্লার দিয়ে জোড়া দেয়া হয়। এখানে রডের কোন ওভারল্যাপিং প্রয়োজন হয় না।
রড জোড়া দেয়ার উপায়সমূহ
রড জোড়া দেয়ার জন্য ৩ টা উপায় আছে
১। ল্যাপিংঃ জোড়ার জায়গায় ২ দিকের রড একটার পাশে আরেকটা ওভারল্যাপ দিয়ে জোড়া দেয়া হয়। এই ওভারল্যাপ অংশের দৈর্ঘ রডের ব্যাসের ৫০-৭০ গুন লম্বা হয়। রড যত বড় হয় এই ওভারল্যাপ অংশের দৈর্ঘ তত বেশী হয়।
২। রিবার কাপ্লারঃ এক প্রকার নাট যা দিয়ে রড জোড়া দেয়া হয়। ২ দিকের রডে প্যাঁচ কাটা হয় এবং রিবার কাপ্লার দিয়ে জোড়া দেয়া হয়। এখানে রডের কোন ওভারল্যাপিং প্রয়োজন হয় না।
৩। ওয়েল্ডিংঃ ২ টা রড ওভারল্যাপ করে ওয়েল্ডিং করা হয়। এতে ওভারল্যাপ দৈর্ঘ্য ল্যাপিং এর চেয়ে কম লাগে।
এই তিন প্রকার রড জোড়া দেয়ার টেকনিকের মধ্যেরিবার কাপ্লার সবচেয়ে বেশী ইকোনোমিক, কাজ করা সহজ এবং ভূমিকম্পরোধী বিল্ডিং বানাতে সহায়ক।

রিবার কাপ্লারের কোয়ালিটি টেস্টঃ
রিবার কাপ্লারের (Rebar Coupler) কোয়ালিটি পরীক্ষা করার জন্য টেনসাইল স্ট্রেংথ (টান সহ্য করার শক্তি) টেস্ট করে দেখতে হবে।
টেস্ট করার সময় রড যদি রিবার কাপ্লারের মধ্যে ছিড়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে রিবার কাপ্লার কোয়ালিটি খারাপ যা ব্যবহারযোগ্য নয়।
টাইপ-১ এবং টাইপ-২ রিবার কাপ্লারের মধ্যে টাইপ-২ রিবার কাপ্লার সর্বোত্তম যা সব ধরণের স্ট্রাকচারে ব্যবহার করা যায়।
টাইপ-২ রিবার কাপ্লারের ক্ষেত্রে রিবার কাপ্লারের বাইরে রড ছিড়ে যায় এবং স্ট্রেংথ রডের সমান হয়। তার মানে হলো, রিবার কাপ্লার টেস্টে যদি রডের প্রয়োজনীয় শক্তি পাওয়া যায় এবং সর্বোচ্চ লোডে রিবার কাপ্লারের বাইরে ছিড়ে যায় তাহলে রিবার কাপ্লারের কোয়ালিটি সন্তোষজনক
টাইপ-১ রিবার কাপ্লারের ক্ষেত্রে রডের শক্তির চেয়ে কম শক্তিতে রড ছিড়ে যায় এবং সর্বোচ্চ লোডে রিবার কাপ্লারের সন্নিহিত প্রান্তে রড ছিড়ে যায়। এই ধরণের রিবার কাপ্লার ভূমিকম্পরোধী ভবন নির্মাণে সহায়ক নয়।
রিবার কাপ্লার (Rebar Coupler) ব্যবহারের সুবিধাসমূহঃ
১। সাশ্রয়ীঃ ল্যাপিং এর মাধ্যমে রড জোড়া দিতে যে পরিমাণ রড ওভারল্যাপ দিতে হয় তা বেঁচে যায়। রড যত বড় হয় ওভারল্যাপ দৈর্ঘ্য তত বেশী হয়। শুধু তা নয়, ল্যাপিং দিতে হয় বীম এবং কলামের নির্দিষ্ট লোকেশনে। এই ল্যাপিং বীম-কলাম জয়েন্টের ভিতরে বা কাছে দেয়া নিষেধ। নির্দিষ্ট লোকেশনে ল্যাপিং দিতে হলে রড নির্দিষ্ট মাপে কেটে টুকরো করতে হয়। এতে করে অনেক ছোট ছোট টুকরো রড তৈরী হয় যা কোন কাজে লাগে না, কেজি দরে অর্ধেকের চেয়ে কম দামে বিক্রী করতে হয়। রিবার কাপ্লারের মাধ্যমে রড যে কোন লোকেশনে জোড়া দেয়া যায়। ওভারল্যাপ লাগে না। ল্যাপিং এ রডের অপচয় রিবার কাপ্লারের দামের চেয়ে অনেক বেশী। ফলে, রিবার কাপ্লারের ব্যবহার খরচ বাঁচায়।
২। ভূমিকম্পরোধীঃ ভূমিকম্পরোধী বিল্ডিং বা স্থাপনা বানাতে হলে বীম-কলাম জয়েন্টে রডের সাজানো এবং সবগুলো রডের মাটাম ঠিকমত করতে হয়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ল্যাপিং অথবা ওয়েল্ডিং এর মাধ্যমে রডের জোড়া দিতে হয় বীম এবং কলামের কিছু নির্দিষ্ট জায়গায়। এই জোড়া বীম-কলাম জয়েন্টের ভিতরে বা কাছে দেয়া নিষেধ। কিন্তু, বাস্তবে দেখা যায় মিস্ত্রীরা রডের অপচয় কমানোর জন্য রডের জোড়া বীম-কলাম জয়েন্টের ভিতরে বা কাছে করে থাকে। এতে বিল্ডিং ভূমিকম্পের সময় ভেঙ্গে পড়ার ঝুঁকিতে থাকে। রিবার কাপ্লার ব্যবহার করলে রডের জোড়া দেয়ার জায়গার স্বাধীনতা বৃদ্ধি পায়। এতে বিল্ডিং ভূমিকম্পরোধী হওয়ার পাশাপাশি রডের অপচয় রোধের মাধ্যমে খরচও কমে। ভূমিকম্পের সময় রডের বাইরের কনক্রীট অনেক সময় ফাটল হয় অথবা খসে পড়ে। এতে ল্যাপিং এর মাধ্যমে জোড়া দেয়া রড লোড নিতে পারে না। রিবার কাপ্লারের মাধ্যমে জোড়া দেয়া রড এক্ষেত্রে লোড নিতে সক্ষম। তাই, রিবার কাপ্লার ভূমিকম্পরোধী বিল্ডিং নির্মাণে অত্যাবশ্যক।
৩। কনক্রীটের শক্তির উপর নির্ভরশীল নয়ঃ ল্যাপিং এর মাধ্যমে রডের জোড়া দিলে কনক্রীটের শক্তির উপর নির্ভর করে জোড়ার শক্তি। কনক্রীট কোন কারনে দুর্বল হলে ল্যাপিং এর মাধ্যমে দেয়া জোড়া অকার্যকর হয়ে পড়ে। কনক্রীট নানা কারণে দুর্বল হতে পারে – ভাইব্রেশন ঠিক মত না হওয়া, মিক্স রেশিও ঠিক না থাকা, বালি বা পাথরের কোয়ালিটি খারাপ হওয়া, পানি বেশী হওয়া ইত্যাদি। রিবার কাপ্লারের মাধ্যমে যে জোড়া দেয়া হয় তা কনক্রীটের কোয়ালিটি খারাপ হলেও কার্যকর থাকে।
৪। লাগানো সহজঃ রিবার কাপ্লারের মাধ্যমে জোড়া দেয়া অত্যন্ত সহজ। রিবার কাপ্লার বিক্রেতা কোম্পানি সাইটে স্পেশাল মেশিনের মাধ্যমে রডের প্রান্তে প্যাঁচ কেটে দেয় এবং নাটের মত দেখতে রিবার কাপ্লার সাপ্লাই দেয়। সাইটে মিস্ত্রীরা রেঞ্চের মাধ্যমে অথবা হাতে রিবার কাপ্লারের মাধ্যমে সহজে রড জোড়া দিতে পারে। ল্যাপিং এর মাধ্যমে রড জোড়া দিতে হলে রড বিশেষভাবে বাঁকাতে হয়। মোটা রড বাঁকানো কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ কাজ। রিবার কাপ্লারের মাধ্যমে জোড়া দেয়ার ক্ষেত্রে এসব কোন ঝামেলা নেই।
৫। মোটা রড জোড়া দেয়াঃ সব দেশের বিল্ডিং কোড মোটা রড জোড়া দেয়ার জন্য ল্যাপিং এর পরিবর্তে রিবার কাপ্লার ব্যবহার করা উৎসাহ দেয়া হয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে অপরিহার্য করা হয়েছে। সুতরাং, মোটা রড জোড়া দেয়ার জন্য রিবার কাপ্লারের বিকল্প নেই।
৬। রডের জট পরিহারঃ ল্যাপিং এর মাধ্যমে রড জোড়া দিলে জোড়ার জায়গায় রড ডাবল হয়ে রডের জট তৈরী হয়। এতে অনেক সময় কনক্রীট প্রবেশ করার পর্যাপ্ত জায়গা থাকে না। রিবার কাপ্লার ব্যবহারে রডের জট হওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকে না।
৭। কনস্ট্রাকশন জয়েন্টঃ অনেক দীর্ঘ স্ট্রাকচার ঢালাইয়ের ক্ষেত্রে কয়েক ধাপে কনক্রীট ঢালাই করা হয়। কনস্ট্রাকশন জয়েন্ট ল্যাপিং এর জন্য বাড়তি রড রেখে দিয়ে সাটারিং করা অত্যন্ত জটিল, অনিরাপদ এবং সময়সাপেক্ষ কাজ। রিবার কাপ্লার ব্যবহারে বাড়তি রড রাখার প্রয়োজন হয় না বলে সহজ, নিরাপদ এবং দ্রুত হয়।
কখন রিবার কাপ্লার (Rebar Coupler) ব্যবহার লাভজনক?
রডের ব্যাস ১৬ মিলিমিটার এবং এর উর্দ্ধে হলে রিবার কাপ্লার ব্যবহার লাভজনক। ৮, ১০ এবং ১২ মিলিমিটার ব্যাসের রডের জন্য রিবার কাপ্লার ব্যবহার লাভজনক নয়।
কখন রিবার কাপ্লার (Rebar Coupler) ব্যবহার বাধ্যতামূলক?
রডের ব্যাস যদি ৩৬ মিলিমিটার এবং তদোর্দ্ধে হয়, তাহলে রিবার কাপ্লার ব্যবহার করা বাধ্যতামুলক। অথবা ওয়েল্ডিং করা যেতে পারে। ল্যাপিং দেয়া নিষেধ।